বছরে যে সময়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে আনন্দে ক্লাস করে সে সময়ে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের নন্দীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীশূন্য রয়েছে। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিক্ষার্থী সংকটে হয় না ক্লাস। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন।
পরিপাটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের সময় দুই-তিনজন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। ক্লাস না হওয়ায় প্রতিনিয়ত অলস সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তারসহ তিনজন শিক্ষক অফিসে বসে আছেন। একজন প্রাক-প্রাথমিকের পাঠ পরিকল্পনা প্রস্তুত করছেন। আর একজন সহকারী শিক্ষক জহিরুল আলম সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে গেছেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে মাত্র চারজন। পরে ক্লাস না নিয়েই স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের অভিভাবক বলেন, ‘এক বছর আগে ছেলেকে এই স্কুলে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রিডিংও পড়তে পারে না। এ জন্য কেউ সন্তানদের এখানে ভর্তি করাতে চান না। সবাই আশপাশের অন্য স্কুল ও মাদরাসায় সন্তানদের পড়াচ্ছেন।’
তবে বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ, স্কুল পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিষেধের কারণে লোকজন তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়টিতে ভর্তি করায় না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পান সহকারী শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত ক্লাস নিতেন না। চার-পাঁচ বছর ধরে একেবারেই ক্লাস নেন না। তাঁর দায়িত্ব অবহেলার কারণে অন্য শিক্ষকরাও নিয়মিত আসেন না। এ কারণে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের এই স্কুলে দিচ্ছেন না।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার বলেন, ‘স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কোনো মিটিংয়ে আসেন না। বিভিন্ন তহবিল থেকে আপ্যায়ন বিলসহ নানা অজুহাতে কমিশন চান। না দেওয়ায় তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের এবং স্থানীয় মানুষজনকে তাদের ছেলেমেয়ে স্কুলে দিতে নিষেধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির সভাপতির কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন না অভিভাবকরা। আমরা শিক্ষকরা নিয়মিত আসি।’
নন্দীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মানিক মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকার কথা মতো ভুয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় এবং তাঁর কথা না শোনায় তিনি আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন।’কাদরা ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ করা না হলে অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবে না।
সেনবাগ ইউএনও জিসান বিন মাজেদ জানান, ২০২২ সালে ম্যানেজিং কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দ্বন্দ্বের জেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তাদের রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী জানান, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।