ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য নিহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাঁদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্তরক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ।
শনিবার গণমাধ্যমে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি ভোরে যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্টসংলগ্ন এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা বিজিবি সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবচেয়ে সহিংস ও রক্তস্নাত। ভারত কর্তৃক বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একজন বিজিবি সদস্য কিভাবে লুঙ্গি আর টি-শার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে মিশে থাকতে পারেন, সেটি তাঁদের বোধগম্য নয়— এই বয়ান শুধু বানোয়াটই নয়, ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ‘বিগ ব্রাদার’সুলভ গরিমা থেকে উৎসাহিত হয়ে বিএসএফ তাঁদের হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। একজন বিজিবি সদস্য কখনোই লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে থাকতে পারেন না। বিএসএফের মন্তব্যের সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ও দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএসএফের এহেন আচরণের ইতিহাস যুগপৎ হিংসাশ্রয়ী ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।
বিবৃতিতে বিএনপি বলে, বরাবরই বিএসএফের কৃত অপরাধকর্ম এবং বয়ানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান থাকে।
তাঁদের আচরণে মনে হয়, তাঁরা আদিম ও মধ্যযুগ পেরোতে পারেনি। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যা করার পর তাঁদের মনগড়া বয়ানকে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশজুড়েই ক্ষোভ ও বিক্ষোভে আলোড়িত। জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতির কারণেই সীমান্তে রক্তপাত থামছে না। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে ‘ব্লাড স্পোর্ট’ বা রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার এটি একটি আধিপত্যবাদী বার্তা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এত দিন বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর এখন সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। অন্য দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় যে শেখ হাসিনার ক্ষমতার লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে আজ তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে। দখলদার আওয়ামী সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্য চক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিজিবিকেও এখন বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
আরো বলা হয়, বিএসএফের ‘ডেলিবারেট কিলিং’ এখন সর্বজনবিদিত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব হত্যাকাণ্ডের আশকারা দেওয়া দিল্লির উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা। শেখ হাসিনা দিল্লির সঙ্গে অধীনতামূলক চিরস্থায়ী ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’র ফলশ্রুতি হচ্ছে বিএসএফ কতৃর্ক সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনায় নিশ্চুপ থাকা। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যার ঘটনা পরের দিন পর্যন্ত জানতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাবিলাসী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নাগরিকদের জীবনের চেয়ে দখলদার আওয়ামী মন্ত্রীদের ক্ষমতা খুব জরুরি। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ।
স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাঁদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্তরক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাঁদের নীতিনির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি। সে জন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে তাঁরা কোনো দায়বোধ অনুভব করে না। ফেলানীসহ সব হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মহল, এমনকি ভারতের বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এর কোনো বিচার বা প্রতিকার করেনি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর হৃদয়বিদারক লাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনো ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিজিবি সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে বিএসএফ কর্তৃক নির্মমভাবে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের জাতিসংঘের তদন্ত দাবিসহ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানানো হয় এবং নিহত ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।