দেশে গত চার বছরে সরকারের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয়েছে এর মধ্যে ২৯৩টির সমাপ্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। অথচ এসব উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন (পিসিআর) জমা দেওয়ার কথা। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত গত চার অর্থবছরে এক হাজার ১৮৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে কিছু প্রকল্প শেষ হলেও বেশির ভাগেরই বেশি সময় লাগে। কিন্তু উল্লিখিত প্রকল্পগুলোর পিসিআর দিতে গড়িমসি করছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। নিয়ম অনুযায়ী পিসিআর আইএমইডিতে জমা দিতে হয়।
তাঁদের কাজ ভালো দেখাতে পারেন। এর পরও কেন তাঁরা দেরি করেন, সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘পিসিআর দেওয়া না হলে শেষ হওয়া প্রকল্পের সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না। তাই আমরা এবার উদ্যোগ নিয়েছি, প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ক তথ্য তারা অনলাইনে আপ করে দেবে। আর কোনো প্রকল্পের তথ্য না পেলে আমরা একটা প্রতিবেদন দিয়ে দ্রুত ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেব। আমরা প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেব। অনেক সময় প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলে প্রকল্প পরিচালকের কোনো খোঁজ থাকে না। তখন পিসিআর পেতে দেরি হয়। তাই এ সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি।’
আইএমইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেষ হওয়া ১০টি প্রকল্পের পিসিআর চার বছর ধরে অপেক্ষা করে না পাওয়ায় তাদের প্রতিবেদন ছাড়াই সমাপ্ত প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইএমইডি। এ ছাড়া ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের ইমপ্রুভমেন্ট অব দ্য রিয়েল সিচুয়েশন অব ওভারক্রাউডিং ইন প্রিজনস ইন বাংলাদেশ প্রকল্প ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কিশোরগঞ্জ স্থাপন প্রকল্পসহ ১০টি প্রকল্পের পিসিআর পাওয়া যায়নি।
পিসিআর জমা না হওয়া একটি প্রকল্পের সাবেক পরিচালক প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঢালাওভাবে গড়িমসির কথা বলা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নানা কারণ থাকে। যেমন অনেক সময় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে এমন একজনকে নেওয়া হয়, যিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই পদে কাজ করেন। এক পর্যায়ে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে তখন এসব প্রতিবেদন দিতে সমস্যা হয়।
প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, এমনকি প্রকল্পের অনেক কর্মকর্তার চাকরি অস্থায়ী হওয়ায় প্রকল্প শেষে তাঁরা চলে যান। এতে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় নথিপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এর দায়-দায়িত্ব তখন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। কিন্তু তারা তো পিসিআর দিতে পারে না। এসব সমস্যা সমাধানে প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাস আগে থেকে পিসিআর তৈরির কাজ শুরু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।