যুবলীগ নেতার স্ত্রী-সন্তানদের নামফলক ভেঙে সরকারি জমি উদ্ধার

নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানের নামে বিদ্যালয় ও স্টেডিয়ামের নামফলক বসিয়ে সরকারি খাস জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের এক ওয়ার্ড যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। সাগর পাড়ের নাজিরারটেক বাসিন্যা পাড়া এলাকার সরকারি চর ভূমি দখলের কৌশল হিসাবে কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোস্তাক আহমদের স্ত্রী নাহিদা মোস্তাক ও তার দুই সন্তান ইমতিয়াজ ও ইমতিহানের নামে লাগানো হয় নামফলক।

 

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের অভিযানে যুবলীগ নেতার এই নামফলক দুটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সাগর পাড়ের ওই এলাকার সরকারি চর ভূমি জবর দখলের প্রতিযোগিতায় নামে স্থানীয় যুবলীগ, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

 

ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মোস্তাক আহমদ নিজেই সাগর পাড়ের খাস জমি দখল করে সবার আগে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে সেখানে আরো কয়েক শ বাড়িঘর গড়ে উঠে। পাড়াটির নামকরণ করা হয়েছে যুবলীগ নেতার নামে ‘মোস্তাক পাড়া।’যুবলীগ নেতা মোসতাক পার্শ্ববর্তী আরো ১০/১২ একর খাস জমি দখলের কৌশল হিসাবে সেখানে একটি খেলার মাঠ ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় করার কথা বলে দুটি নামফলক স্থাপন করে।

 

এ কারণে তিনি নিজের স্ত্রী নাহিদা মোস্তাকের নামে ‘নাহিদা মোস্তাক প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ও দুই শিশুর নামে ‘ইমতিয়াজ-ইমতিহান স্টেডিয়াম’ নামে একটি খেলার মাঠের পৃথক নামফলক দেওয়া হয়। ফলকে প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে লেখা হয় যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহমদের নাম। গত বছরের ৬ অক্টোবর কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান স্টেডিয়াম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম দিয়ে ভিত্তি ফলকটি উদ্বোধন করেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্যা পাড়ার প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেম বাসিন্যা অভিযোগ করে বলেন ‘আমাদের পাড়ার লোকজন সরকারি জমিতে যাতে বাসা বাড়ি করতে না পারে সেজন্য তাড়াহুড়ো করে যুবলীগ নেতা মোস্তাক তার স্ত্রী ও ছেলেদের নামে সরকারি জমি দখল করে নেয়।

 

তবে যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আবুল কাসেম বাসিন্যার দখলের থাবা থেকে রক্ষা করতে আমি সেখানে মেয়র মহোদয়কে এনে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম।’ তিনি নিজের স্ত্রী-সন্তানদের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে স্থানীয় এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আকতার কামাল কালের কণ্ঠকে জানান, শিশু-কিশোররা মাঠটিতে প্রতিদিন খেলাধুলায় মেতে থাকে। স্থানীয়দেরও দাবি মাঠটিতে খেলাধুলার সুযোগ রাখা দরকার।

 

কেন নামফলক দুটি ভাঙা হয়েছে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী জানান ‘ফলক দুটি সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলের বিষয়টি জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের নজরে আসে। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযানে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হয়।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, নামফলক ভাঙার ব্যাপারটি তিনি জানেন না। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। নামফলক ভাঙার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানান।

 

ওই এলাকায় স্থানীয় এক নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলম খাস জমি দখলের পর মাছের খামার গড়ে তোলেন। সেই খামারে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয় মরা হাঁস-মুরগি ও হোটেলের উচ্ছিষ্ট খাবার হিসাবে দিয়ে। একদিকে সরকারি জমি জবর দখল এবং অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ মাছ চাষের অভিযোগ উঠায় গতকাল সেই মাছের খামারটিও গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। অপরদিকে আকতার কামাল নামের একজন বিএনপি নেতা অনুরূপ একই এলাকায় বিশাল এলাকার খাস জমি দখলে নিয়ে ইউক্লিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা রোপণ করেছেন। তবে আকতার কামাল খাস জমি দখলের কথা অস্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *