মূলত দুই কারণে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কারণ দুইটি হলো—দলের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ সংঘাত এড়ানো এবং নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে এ কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ উন্মুক্ত রাখায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বড় ধরনের সংঘাতপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর বাড়াতে চাইছেন না তাঁরা।
গত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দুই ঘণ্টা আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেন।
সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, তফসিল ঘোষণার পর দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকে উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র বলেছে, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো ধারণামতো নির্বাচন বর্জন করলে উপজেলা নির্বাচনে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই। সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও যদি দল কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়, তাহলে মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হবেন। দলের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি আরো বেড়ে যাবে। স্বতন্ত্রদের আটকালে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। এতে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠবে। তাই প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখাই সবচেয়ে ভালো পথ মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। কিন্তু আমাদের দলের তৃণমূলে সাংগঠনিক ক্ষতি হয়েছে। ফলে উপজেলায় আর নৌকার বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান না কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার আরেকটি বড় কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে—দলীয় প্রতীক নৌকার প্রতি নেতাকর্মীদের আবেগ ধরে রাখা। নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হলে দলের নেতাকর্মীরা অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন। এতে করে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়াটা তাঁদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।