শতবর্ষের স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙাগড়ায় ক্ষোভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে শতবর্ষের স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণকাজ প্রায় ১৩ মাস আগে শুরু হয়। এরই মধ্যে স্তম্ভটির বিভিন্ন অংশে কয়েকবার ভাঙাগড়ার কাজ হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, বারবার ভাঙাগড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনার দুর্বলতা ও টাকার অপচয়।

 

গত শুক্রবার মল চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে স্থাপন করা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা নামফলকটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর আগে ভাঙা হয়েছিল স্মৃতি চিরন্তনের বিপরীত পাশের লনের সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া মেঝের বেশ কিছু অংশ ও গোল আকৃতির সিমেন্টের একটি বেদি। এ ছাড়া পুরো চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া মেঝের ছোট ছোট অংশ ভাঙা হয়েছে।

 

চলমান কাজে এমন ভাঙাগড়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

তাঁরা বলছেন, কিছুদিন পর পর এমন ভাঙা, তারপর আবার অন্য কিছু তৈরি করা, এসব প্রমাণ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনায় ভুল ছিল। এ রকম ভেঙে আবার নতুন কিছু তৈরি করা এতে অতিরিক্ত টাকা লাগছে, টাকার অপচয় হচ্ছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারেজ রানা বলেন, ‘শতবর্ষী মন্যুমেন্ট নিয়ে যে ভাঙাগড়ার খেলা শুরু হয়েছে, তাতে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বোঝা যায়। বাস্তবায়ন কমিটিও এ ক্ষেত্রে সমান দায়ী। তাহলে কি আমরা বলব, ঢাবি প্রশাসন একটা প্রকল্পে তিন-চারবার ভুল করার পর প্রকল্পটা বাস্তবায়ন করতে পারে?’ 

গত ডিসেম্বরে স্মৃতি চিরন্তনের বিপরীত পাশের লনের সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া মেঝের কিছু অংশ ভেঙে সেখানে সবুজায়নের কাজ করা হচ্ছে। গত ২৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি কালচার সেন্টারকে এই সবুজায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, স্মৃতি চিরন্তনের বিপরীত পাশের লন ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিপরীত পাশের লনে এরই মধ্যে ঘাস লাগানো হয়েছে। লনের চারদিকে ফুলগাছ লাগানোর জন্য লম্বা বেদি প্রস্তুত করা হয়েছে।আরবরি কালচার সেন্টারের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার ফেকুলাল ঘোষ বলেন, ‘এরই মধ্যে ঘাস লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। ফুলগাছ লাগানোর জন্য মাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই সেখানে ফুলগাছ লাগানো হবে। মার্চ-এপ্রিল নাগাদ লন দুটি সুন্দর ঘাসে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।’

 

নামফলক ভেঙে ফেলার বিষয়ে মনুমেন্টের কাজে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ঢাবির প্রধান প্রকৌশলীর অফিসে কথা বলে জানা গেছে, নামফলকটি উচ্চতায় নিচু হওয়ায় এবং এর বর্ণে সমস্যা থাকায় এটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এদিকে মনুমেন্ট নির্মাণে বাজেট ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মনুমেন্ট নির্মাণ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার পর গত বছরের জুনে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে ঢাবির প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. আক্রাম হোসেন বলেন, আগে যা বাজেট হয়েছে, সেই বাজেটের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। নতুন করে কোনো বাজেট দেওয়া হচ্ছে না কাজের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *