বাংলা ভাষা কোনোদিন শেষ হয়ে যাবে না কারণ পশ্চিমবঙ্গের কাছেই আছে বাংলাদেশ। শনিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবস’ অনুষ্ঠানে ‘সংযোগের সেতুবন্ধন: সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই মন্তব্য করেন বিশিষ্ট কবি ও পশ্চিমবঙ্গ কবিতা একাডেমির চেয়ারম্যান সুবোধ সরকার।
এদিনের সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সম্মানিত আলোচক হিসেবে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক চিন্ময় গুহ, আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সম্মানিত অতিথি ছিলেন কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিবিদ চট্টোপাধ্যায়, গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
বইমেলা প্রাঙ্গণের এস.বি.আই অডিটরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে সুবোধ সরকার বলেন, ‘সেতু জোর করে তৈরি হয় না। এটা হাওড়া ব্রিজ বা পদ্মা সেতু নয় যেখানে অনেক পয়সা লাগে, অনেক লোক লাগে। সেতুটা আমাদের মধ্যেই আছে, নতুন করে সেতু তৈরি করতে হবে না।’ বাংলা ভাষা, বাংলার বইমেলা ও বইমেলায় বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে সুবোধ বলেন, ‘কলকাতা বইমেলা এমন একটি বইমেলা যেখানে বাংলাদেশ ছাড়া কোনোদিন এই বইমেলা হয়নি, কোনোদিন হবেও না। আজকের দর্শকরাও যে টানে এখানে ছুটে এসেছেন, তার পেছনেও রয়েছে সেই বাংলা ভাষার প্রতি টান।’
সুবোধ সরকার বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ভারতের মতো এত ভাষাভাষীর দেশে পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার কী হবে? কিন্তু আমি বলব বাংলাদেশের মত একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাকার কারণে পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা কোনোদিন শেষ হয়ে যাবে না। যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেঘ এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টি দিয়ে যায় বা তার উল্টোটা হয়, ঠিক সেভাবেই একটা সাংস্কৃতিক ঢেউ সর্বক্ষণ আছড়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতার উপর। এই ঢেউ কেউ কোনোদিন বন্ধ করে দিতে পারবে না। কোনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেই যে এটা বন্ধ করে দিতে পারে। ভাষা তার নিজের প্রয়োজনে নিজের ঢেউ তৈরি করে নিতে পারে। সাহিত্য তার নিজের প্রয়োজনে এপারে ছুটে আসবে আবার ওপারে ছুটে যাবে। যেভাবে এপারে একটা ভালো গান তৈরি হলে তা ওপারে ছুটে যায়, তেমনি বাংলাদেশের একটা ভালো কবিতা তৈরি হলে তার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় পৌঁছে যায়।’
গত বছর কলকাতার নন্দনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রসঙ্গ টেনে সুবোধ সরকার বলেন, “বাংলাদেশের ‘হাওয়া’ ছবি দেখার জন্য শিশির মঞ্চ ছাড়িয়ে লম্বা লাইন এক্সাইড মরে চলে যায়, দীর্ঘকাল পর এরকম একটি ছবির জন্য এত দীর্ঘ লাইন দেখেছিলাম। কি করে হলো? কারণ একটা ভালো কবিতা, ভালো গান বা ভালো ছবি যেটা একই ভাষার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে সেটা যতটা সংযোগ তৈরি করতে পারে তা অন্য কিছু পারে না।’ এ প্রসঙ্গে লিটল ম্যাগাজিনের প্রশংসা করেন তিনি।
রাম মন্দির উদ্বোধন প্রসঙ্গ টেনে সুবোধ সরকার বলেন, ‘এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব একটা ঘটনার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা হচ্ছে রাম মন্দির। এই বই মেলা রাম মন্দিরকে চ্যালেঞ্জ। এই বইমেলা যে আসল মন্দির ও মসজিদ।’