দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৬২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বলে নিজের এলাকায় কর্তৃত্ব রাখেন। সরকারি দলের সূত্রে সেই কর্তৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় বিরোধী দলের আসনে বসতে অনাগ্রহী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান ও মর্যাদা অপরিবর্তিত থাকলে সংখ্যার হিসাবে গত দুটি সংসদের মতো দ্বাদশ সংসদেও বিরোধী দল হতে হবে জাতীয় পার্টিকেই (জাপা)।
গত ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের পর সর্বোচ্চ ২২২ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতা ও উপনেতা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ওই সভায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ১১ জানুয়ারি নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে তা নিশ্চিত হয়নি।
কারণ দল হিসেবে জাপা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন (১১টি) পেলেও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সংখ্যা তাদের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি। এতে সিদ্ধান্তগ্রহণে জটিলতা দেখা দেয়। স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ হলে তাঁরাও বিরোধী দল হতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করেন। তবে বিরোধী দলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের।
স্বতন্ত্র সদস্যরা সরকারি দলের সমর্থনে পাশে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় পদ-পদবি নিয়ে কোনো জটিলতায় পড়তে হবে না। কিন্তু জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দলে গেলে সরকারি দলে কর্তৃত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারি দলের এমপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না তাঁরা। বিরোধী দলে বসলে সরকারের কমবেশি সমালোচনাও করতে হবে।
এতে আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সমস্যা হতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হচ্ছে স্বতন্ত্রদের।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘এখনো বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী দিনে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্বতন্ত্র সদস্যরা জোট গঠন করতে পারেন, তবে তাঁদের মধ্য থেকেই কেউ বিরোধীদলীয় নেতা হবেন কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি।’
স্বতন্ত্ররা সিদ্ধান্ত না নিলেও বিরোধী দলে থাকতে মরিয়া গত দুই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের আগে থেকেই এ বিষয়ে সরকারি দলের সঙ্গে তাদের দেনদরবার চলছিল। নির্বাচনে হতাশাজনক ফল, অন্তঃকোন্দলসহ নানা সংকটে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবারও সংসদে বিরোধী দলে থাকবেন বলে আগ্রহ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বতন্ত্ররা সংখ্যায় বেশি হলেও তাঁরা দল নন। জাতীয় পার্টি দল হওয়ায় বিরোধী দল হবে। সংসদ অধিবেশন শুরুর আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি।’