দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীদের একটি প্ল্যাটফরম তৈরির চেষ্টা করছে দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের একটি অংশ। নির্বাচনে ভরাডুবির বিষয়টি সামনে এনে এরই মধ্যে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ রবিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিক্ষুব্ধ নেতাদের সভা হবে। এতে সারা দেশের জেলা পর্যায়ের নেতা ও নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানিয়েছে, চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আহবান ছাড়া কেউ যাতে বিক্ষুব্ধদের সভায় অংশ না নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের বাইরে জাতীয় পার্টিতে এখন পর্যন্ত কেউ কিছু করতে পারেনি।
অতীতে এ ধরনের চেষ্টা হয়েছে, কেউ সফল হয়নি। ওই নেতা দাবি করেন, জাপার নেতৃত্বের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদ রয়েছে। সরকার পক্ষে থাকলে অন্য কেউ সফল হবে না। জাপার বিক্ষুব্ধদের একটি অংশ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রার্থীদের খোঁজখবর না নেওয়া, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় সফল হতে না পারাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনে।
গত বুধবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ অংশের সঙ্গে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠদের যোগাযোগ আছে। তাঁদের ইন্ধনেই বিক্ষুব্ধরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদেরের অনুাসারীরা।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলা বলেন, পরাজিত প্রার্থীরা সভা ডেকেছেন। কেন্দ্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে তিনিসহ কয়েকজন থাকবেন। এই সভা কোনোভাবেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নয়। এটা একটি পর্যালোচনামূলক সভা। তিনি কোনোভাবেই দলে বিভক্তির পক্ষে নন।
পরাজিত প্রার্থীদের কয়েকজন বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের অদূরদর্শিতার কারণে সমঝোতার বেশির ভাগ আসনে ভরাডুবি হয়েছে। দলের সহযোগিতা না পেয়ে অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েও নীরবে মাঠ ছেড়েছেন।বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ রওশন এরশাদকে সামনে এনে দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরির কথাও বলছেন। তবে এতে সবার সায় নেই। বিক্ষুব্ধদের অনেকে মনে করেন, দলের বর্তমান নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ না জানিয়ে মত প্রকাশ করা যায়।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিক্ষুব্ধরা সভা ডেকেছেন। আপাতত আর কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। সভায় কী ধরনের আলোচনা হয় এবং কী ধরনের পরামর্শ আসে, তা নজরে রাখবেন তাঁরা।
‘ষড়যন্ত্রকারীরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বেন’
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে যারাই ষড়যন্ত্র করেছেন, তাঁরাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আবারও যাঁরা ষড়যন্ত্র করবেন, তাঁরাও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বেন। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের এক সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। তাঁরা দাবি করেন, জাতীয় পার্টি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে।
সভায় বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, ভাইস চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ শফি প্রমুখ।