’ গত বছরের এপ্রিলে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন মিয়ানমার সীমান্তের কাছে একটি শহরে। নিরাপত্তার কারণে ইয়ানের আসল পরিচয় দেওয়া হয়নি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয়। নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে জান্তা বাহিনী। জান্তা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এখন একসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। অনেকে সরকারের ভেতরে থেকে গোপনে বিদ্রোহীদের হয়ে কাজ করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ অফিসার ইয়ান তাঁর ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০২০ সালের শেষের দিকে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক বাহিনীর নৃশংস আচরণের কারণে তার মোহভঙ্গ ঘটে।
তিনি বলেন, ‘লোকেরা আমাদের দেখে ভূত দেখার মতো আচরণ করত। তারা আমাদের ঘৃণা করত।’ সেই অভ্যুত্থানের পর তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে ইয়ানের ভাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার আগে ইয়ানকে বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে দিয়ে যান। বার্মিজ ভাষায় যাকে তারা ‘তরমুজ’ ডাকত। এই তরমুজের অর্থ, বাইরের দিকে সবুজ অর্থাৎ সেনাবাহিনীর প্রতি অনুগত কিন্তু ভেতরে লাল, যা গণতন্ত্রের বহিষ্কৃত ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি’-এর রং।
ইয়ান জানান, তাঁর সহকর্মীদের দৃষ্টির আড়ালে কাজের ফাঁকে থানা থেকে বেরিয়ে এসে জান্তাবিরোধীদের বার্তা পাঠাতেন। যার মধ্যে ছিল জ্যেষ্ঠ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের যাতায়াতের রুট বা কোথায় যাচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সংখ্যাসহ জ্বালানি এবং অস্ত্র সম্পর্কে তথ্য। তিনি আরো জানান, তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কিভাবে তাঁর সরবরাহকৃত তথ্য ব্যবহার করত, তা তিনি জানেন না। তবে রয়টার্স স্বাধীনভাবে তাঁর মন্তব্য যাচাই করতে পারেনি।
আরো একজন ব্যক্তি, যিনি সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে এসেছেন, তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করা ছিল কঠিন ও বিরল। তবে এমন অনেকেই ছিলেন, যারা বিদ্রোহী কার্যকলাপ দেখেও না দেখার ভান করে থাকতেন।’ সেনাবাহিনী গুপ্তচরদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে সামরিকপন্থী সামাজিক মিডিয়া চ্যানেলগুলো এমন সৈন্যদের নাম প্রকাশ করেছে, যারা বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে হয়।
বিদ্রোহী দলগুলো বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর কতজন সদস্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে তথ্য সরবরাহ করেছিল তা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে তাঁদের সংখ্যা কম হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে সামরিক সরবরাহের পরিবহনও রয়েছে। এর ফলে জান্তাবিরোধী দলগুলো তাদের আক্রমণের পরিকল্পনা করতে সাহায্য পেয়েছিল।
অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত জান্তার জন্য একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করে ফেলেছে বলে কিছু বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক থিংকট্যাংক ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট ফর পিসের ধারণা, প্রায় আট হাজার মানুষ নিরাপত্তা বাহিনী থেকে পালিয়ে গেছে। পূর্বে সামরিক ব্যাটালিয়ন কয়েক শ সদস্য নিয়ে গঠিত ছিল, কিন্তু এখন বেশির ভাগের সংখ্যা ১৩০-এর কিছু বেশি।
সূত্র : রয়টার্স