দেশে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বছরজুড়ে অস্থির ছিল খাদ্যপণ্যের বাজার। বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে যেখানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৫৭ শতাংশ, সেখানে নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি এসে দাঁড়ায় ৯.৪৯ শতাংশে। জানুয়ারিতে যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৭৬ শতাংশ, তা নভেম্বর মাসে এসে দাঁড়ায় ১০.৭৬ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সঠিক নজরদারির অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকেনি, বরং বেড়ে চলেছে। সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা এবং বাজারের দেখভালের ওপর তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছেন। নইলে সামনের দিনে মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরে রাখা কঠিন হবে। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন উৎপাদন ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা।
তা না হলে সামনের দিনগুলোতে এই পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় আশঙ্কা জোরালো।
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫ শতাংশ
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২.৫৬ শতাংশে পৌঁছে। এক যুগের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ। শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতিই নয়, বেড়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও।
অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির গড় ৯.৯৩ শতাংশ, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯.৭২ শতাংশ। গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯৯ শতাংশ। শহর ও গ্রামে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও।
অক্টোবর মাসে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৫৮ শতাংশ, গ্রামে ১২.৫৩ শতাংশ ছিল। মূল্যস্ফীতির এই উল্লম্ফনের পেছনে আলু ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধি মূল কারণ বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ডিম আর আলুর মূল্যবৃদ্ধি।’ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আলু আমদানি হচ্ছে। এখন অগ্রহায়ণ মাস। মাঠে অনেক ফসল রয়েছে। আশা করছি, সামনের দিনে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। সরকারও মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
গত এক যুগের মধ্যে অক্টোবরে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে বলে বিবিএসের তথ্য বলছে। এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২.৫৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে ছিল ১২.৩৭ শতাংশ এবং আগস্টে ছিল ১২.৫৪ শতাংশ। অথচ গত বছরের অক্টোবরে এই হার ছিল ৮.৫০ শতাংশ। বছর ঘুরতেই বেড়েছে ৪.০৬ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৭৬ শতাংশ, যা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৫.৬০ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে এই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২.১৬ শতাংশ। চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮ থেকে ৯ শতাংশের ঘরে।
চলতি বছর এপ্রিলে প্রথমবারের মতো আইএলওর পরিবর্তে আইএমএফের পদ্ধতি অনুসরণ করে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ জন্য আটটি গ্রুপের পরিবর্তে ১২টি গ্রুপে ভাগ করে মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করা হয়েছে। মে মাসেও একই পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস।
আগে ৪২২টি পণ্যের ভোক্তামূল্য হিসাব করা হলেও এখন করা হয় ৭৫৯ পণ্যের। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম মদ, সিগারেট, বেভারেজ ও মাদকদ্রব্য, সন্তানের শিক্ষার খরচ, পরিবারের ইন্টারনেট খরচ, হোটেলে খাবারের খরচসহ আরো বেশ কয়েকটি খাত।