দেশের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় রোগীদের বাড়তি দামে হার্টের রিং কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে হার্টের ব্লকের মাপমতো রিং না মেলায় অনেক রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরত যেতে হচ্ছে। এতে হাসপাতালগুলোতে কমেছে রিং পরানোর হার।
গত ১২ ডিসেম্বর দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর করোনারি স্টেন্টের (হার্টের রিং) নতুন মূল্য নির্ধারণ করার পর থেকে হাসপাতালগুলোতে ১০ দিন ধরে রিং সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ২৪টি আমদানিকারক ও সরবরাহকারক।
হার্ট ফাউন্ডেশনের একজন চিকিৎসক জানান, সরবরাহ বন্ধ করার পর থেকে রোগী ফেরত যাচ্ছে। আগে দিনে ৩৫ থেকে ৪০টি রিং পরানো হতো, এখন গড়ে ২৫টিতে নেমে এসেছে। এর একমাত্র কারণ সাইজ মিলছে না।নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, গড়ে প্রতিদিন ৪০টির মতো হার্টের রিং পরানো হতো। এখন তা কমে দিনে ২৫টি হয়েছে। কয়েকজন রোগীর ব্লকের মাপমতো রিং না পাওয়ায় অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০টি হার্টের রিং পরানো হতো। সরবরাহ বন্ধের পর থেকে তা ১০টিতে নেমে এসেছে। যাদের বেশি জরুরি, তারা বেশি দাম হলেও রিং পরাচ্ছে। কিন্তু দরিদ্র রোগীদের ক্ষেত্রে তা বহন করার মতো না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছে।
বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও মূল্য নির্ধারণী কমিটির সদস্য ডা. এস এম মোস্তফা জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ করে বেশ কিছু কম্পানি যেহেতু তাদের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, সে কারণে অনেক সময় ব্লকের সাইজ অনুযায়ী রিং মেলানো যাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব এ পরিস্থিতি আমরা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই। ঔষধ প্রশাসনকে দায়িত্ব নিয়ে এ ব্যাপারে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের তিন কম্পানির রিং। দেশে হার্টের রিংয়ের নতুন খুচরা মূল্য ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে ঔষধ প্রশাসন। কিন্তু এই নতুন দাম নিয়ে আপত্তি জানায় ইউরোপীয় রিং আমদানিকারক ও সরবরাহকারীরা। ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা হাসপাতালে রিং সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তিন কম্পানির রিং। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ২০ থেকে ৪০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের রিং। অন্য কম্পানির রিং সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগীর ব্লকের মাপ অনুযায়ী এসব রিং পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের চেয়ে তিন গুণ বেশি দাম নির্ধারণ করার যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, ভারতে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় রিংয়ের ব্যবহার বেশি হয়। এতে আমদানিও বেশি। এ জন্য রিংয়ের খরচও অনেক কম।
রিংয়ের দাম সমন্বয় হলে দেশে সব ধরনের হার্টের রিং সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকায় দেওয়ার আশ্বাস দেন মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াসিম আহমদ। তিনি বলেন, ‘সব কম্পানিকে এই দামে রিং বিক্রি করতে হবে। এটি সমন্বয় করবে ঔষধ প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানি থেকে যারা আমদানি করছে, তারা শুধু তাদের মার্কআপ ফর্মুলা দিয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি।’
রিংয়ের মূল্যবৃদ্ধির দাবির পক্ষে থাকা আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের একাংশ জানিয়েছে, সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে থাকা রিং ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তারা বলছে, আবার দাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সরবরাহ বন্ধ রাখবে।