আশার আলো এবং পিছিয়ে পড়ার গল্প

 

আরেকটি বছর যখন শেষ হওয়ার অপেক্ষায়, তখন স্পোর্টস তুলে আনার চেষ্টা করছে পেছনে ফেলে আসা মণি-মুক্তা। ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের জনপ্রিয় সব খেলার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব মেলানোর পালায় আজ থাকছে ঘরোয়া ফুটবলের সালতামামি_

১৪ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। নিশ্চিতভাবে ২০২৩ সালে জামাল ভুঁইয়াদের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সঙ্গে যোগ হয়েছে র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে লড়াইয়ের মানসিকতা। উন্নতি হয়েছে ফিফা র‍্যাংকিংয়েও। ১৯২ থেকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১৮৩তে। ২০২৩ সাল ছেলেদের ফুটবলে নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে, তা বলাই যায়।

 

যদিও বছর শুরু হয়েছিল ‘শৌখিন’ দল সিশেলসের বিপক্ষে ব্যর্থতা দিয়ে। তবে সেই ব্যর্থতার ছাপ লাগতে দেয়নি জুনে ভারতের বেঙ্গালুরুতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। শক্তিশালী লেবাননের কাছে ২-০ গোলে হারলেও সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের লড়াইয়ের মানসিকতা আলাদাভাবে নজর কেড়েছিল। যেটার প্রতিফলন দেখা যায় পরের দুই ম্যাচে। পিছিয়ে পড়েও মালদ্বীপ ও ভুটানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় হাভিয়ের কাবরেরার দল। দুই ম্যাচে দুটি দৃষ্টিনন্দন গোল করে দেশের ফুটবলে আশার আলো হয়ে আসেন তরুণ শেখ মোরসালিন।

 

এরই মধ্যে ৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪ গোল। সাফের সেমিতে অতিরিক্ত সময়ের গোলে কুয়েতের কাছে ১-০ গোলে হেরে ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। এরপর ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ড্র করে বাংলাদেশ। এই সময় বাংলাদেশ পেয়েছে আরেকটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এ বছরই আন্তর্জাতিক পথচলা শুরু হয়েছে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার।

 

জাতীয় দলের বছরের শেষটা হয়েছে দারুণ। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে বাংলাদেশ খেলছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। কাবরেরার অধীনে এ বছর ১৩ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় পাঁচটি, হার ও ড্র চারটি করে। সুবাদে এই স্প্যানিয়ার্ডের সঙ্গে আরো এক বছরের চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে বাফুফে। পাঁচ ফুটবলারের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাণ্ডের সঙ্গে শেষ হতে চলা বছরে বাফুফের দুর্নীতিও সংস্থাটির গায়ে দুর্নামের কালি মেখেছে। ফিফা ফান্ডের টাকা নয়ছয় করে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। এরপর বাফুফে থেকেও তাঁকে করা হয় আজীবন নিষিদ্ধ।ছেলেদের ফুটবল আশার আলো বয়ে আনলেও মেয়েদের ফুটবলে বছরের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল হতাশা। টাকার অভাবে মার্চে অলিম্পিক বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে মিয়ানমারে দল না পাঠানোর ঘটনায় তোলপাড়ও উঠে যায়। এরপর সাফ জেতা দলে শুরু হয় ভাঙনের গল্প। দীর্ঘদিনের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন মেয়েদের ফুটবলের দায়িত্ব ছাড়েন। ফুটবলই ছেড়ে দেন সাফজয়ী দলের চার সদস্যও। টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই সাফ জেতার ৯ মাস পর গত জুনে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে মেয়েরা। যদিও হারাতে পারেনি নেপালকে। বছর শেষে সেই জয় এসেছে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। মাঠে তেমন খেলা না থাকলেও মাঠের বাইরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে বিদ্রোহ করে সফলও হন সাবিনারা।

 

ঘরোয়া ফুটবলে আবারও দাপট দেখিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। জিতেছে টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা। নতুন মৌসুমের শুরুটাও করেছে দারুণভাবে। এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাধীনতা কাপে। এদিকে আরো একবার এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে কিংসকে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ওড়িশা এফসির বিপক্ষে রেফারির বিতর্কিত এক লাল কার্ডে কপাল পোড়ে কিংসের। বয়সভিত্তিক ফুটবলে এবার সেভাবে আসেনি সাফল্য। বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের শিরোপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে ছেলেদের কোনো দলই সাফল্য এনে দিতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *