পুতিনবিরোধী সেই রাজনীতিবিদের খোঁজ পাওয়া গেছে

অ্যালেক্সেই নাভালনি। ছবি : রয়টার্স

 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁর মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি জীবিত আছেন এবং তাঁকে সাইবেরিয়ার একটি পেনাল কলোনি বা কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। পেনাল কলোনি একধরনের বসতি, যেখানে কারাবাসীদের নির্বাসনে দেওয়া হয় এবং তাদেরকে একটি দুর্গম জায়গা বা দ্বীপে রাখার মাধ্যমে বাকি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করা হয়।

 

গতকাল ২৫ ডিসেম্বর তাঁর মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ বলেছেন, ‘আমরা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে পেয়েছি।

বর্তমানে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে রয়েছেন তিনি।’ এর আগে গত ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে নিজের দলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না নাভালনির। সেদিন তাঁকে আগের একটি কারাগার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সহিংস কর্মকাণ্ড, অর্থায়ন এবং অন্যান্য অপরাধের দায়ে গত আগস্টে নাভালনিকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই দণ্ডের আগেই প্রতারণার অভিযোগে ১১ বছরের কারাভোগ করছিলেন তিনি। তবে নাভালনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ২০২১ সাল থেকে কারাগারে ছিলেন।

 

এক টেলিগ্রাম বার্তায় মিজ ইয়ারমিশ লেখেন, ‘তাঁর আইনজীবী আজ তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।

 

তিনি ভালো আছেন। নাভালনিকে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত জেলা ইয়ামালো-নেনেটসে অবস্থিতি আইকে-৩ নামে একটি পেনাল কলোনিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।’ এর আগে নাভালনিকে মস্কো থেকে ২৩৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মেলেখোভো নামে একটি জায়গায় রাখা হয়েছিল। নতুন কারাগার সংক্ষেপে ‘পোলার উলফ’ বা ‘বরফের হায়েনা’ নামে পরিচিত এবং পুরো রাশিয়ায় সবচেয়ে কঠোর জেলখানাগুলোর মধ্যে একটি। বেশির ভাগ বন্দিই মারাত্মক ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং বন্দিদের সেখানে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়।

 

নাভালনি বন্দি থাকা সত্ত্বেও প্রায়ই তাঁর আইনজীবীদের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রেমলিনের ওপর কঠোর আক্রমণাত্মক পোস্ট করতে পারতেন। কারাগারের পেছনে তাঁর অগ্নিপরীক্ষা বর্ণনা করতেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পুতিনের নিন্দা করতেন। কিন্তু তিনি বাইরের বিশ্ব থেকে আরো বিচ্ছিন্ন হন যখন তাঁর তিন আইনজীবীকে অক্টোবরে ‘চরমপন্থী’ কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

৪৭ বছর বয়সী নাভালনি পুতিনবিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বছরের পর বছর ধরে তিনি পুতিন সরকারকে অভিজাতদের দুষ্ট ও চোরের একটি দল হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি জার্মানি থেকে ২০২১ সালে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফিরে আসার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ২০২০ সালে নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় তাঁকে চিকিৎসার জন্য রাশিয়া থেকে জার্মানিতে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ফের দেশে ফেরেন তিনি। রাশিয়ায় পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাভালনি বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে আছে, জালিয়াতি এবং আদালত অবমাননা থেকে শুরু করে ‘চরমপন্থী’ কার্যকলাপ। এ সবই ছিল তাঁকে চুপ করানোর জন্য পুতিনের আক্রমণ।

 

রুশ কর্তৃপক্ষ নাভালনি ও তাঁর সমর্থকদের চরমপন্থী হিসেবে দেখে। তাদের অভিযোগ, নাভালনির দল পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। পুতিন পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে যেকোনো হস্তক্ষেপ আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।

 

সূত্র: বিবিসি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *