চলতি বছরের শেষ দিকে টানা কয়েক মাস আমদানি-রপ্তানি কমে গেলেও নভেম্বর থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং গত বছরের তুলনায় বাড়লেও কিছুটা কমেছে রপ্তানি। বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য, পাথর ও কয়লা আমদানি অনেক বেশি হওয়ায় বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে বাল্ক কার্গো (খোলা পণ্য) ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং অনেক বেড়েছে। ব্যবসায়ী এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট শুরু হয়।
পণ্য আমদানি করতে এলসি খুলতে পারছিলেন না ব্যবসায়ীরা। এখনো পুরোপুরি এই সংকট না কাটলেও আগের তুলনায় পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো, কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কার্গো (জাহাজে করে খোলা পণ্য পরিবহন) হ্যান্ডলিং হয়েছে পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৯০২ টন। একই সময়ে ২০২২ সালে কার্গো হ্যান্ডলিং হয় চার কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার ৫৪৩ টন।
বেড়েছে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩৫৯ টন বা ২.৭৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৯ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক কনটেইনার)। একই সময়ের ২০২২ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ টিইইউএস। বেড়েছে ১৩ হাজার ৯৩২ টিইইউএস বা ১.০৮%।
তবে একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক জাহাজ আসা কমেছে ৯৫টি। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর—পাঁচ মাসে জাহাজ আসে এক হাজার ৭৩৮টি। আর একই সময়ে ২০২২ সালে জাহাজ আসে এক হাজার ৮৩৩টি। কমেছে ৫.৪৬ শতাংশ। এদিকে পৃথক হিসাবে কার্গোতে করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চিত্রে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা খোলা পণ্য আমদানি (কার্গো) করেছেন চার কোটি ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টন।
আর একই সময়ে ২০২২ সালে আমদানি হয় চার কোটি ৫৯ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৫ টন। বেড়েছে ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৩২ টন বা ৩.২১ শতাংশ।
২০২৩ সালের (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচ মাসে ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করেছে ৩০ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টন। ২০২২ সালের একই সময়ে রপ্তানি হয় ৩১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৮ টন। রপ্তানি কমেছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ টন বা ৩.৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে কনটেইনারে করে পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা ছয় লাখ ৯৩ হাজার ২১৪ টিইইউএস। একই সময়ে ২০২২ সালে ছয় লাখ ৬২ হাজার ৭৮৬ টিইইউএস। বেড়েছে ৩০ হাজার ৪২৮ টিইইউএস বা ৪.৩৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচ মাসে ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করেছেন পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ টিইইউএস। ২০২২ সালের একই সময়ে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৮০১ টিইইউএস। কমেছে ছয় হাজার ৪৯৬ টিইইউএস বা ১.০৯ শতাংশ।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পণ্য আমদানি করায় বন্দর দিয়ে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। তা ছাড়া সার্বিকভাবে দেশের আমদানি-রপ্তানি কমেছে। এটার কারণ বৈশ্বিক। যুদ্ধের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমেছে। অর্ডার কম হওয়ায় দেশে উৎপাদনও কমেছে। শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুকবলেন, অবরোধ হরতালের তেমন একটা প্রভাব পড়েনি বন্দরের হ্যান্ডলিংয়ে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকটসহ যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এর প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে যে হারে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে, তার চেয়েও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। সেগুলোর জন্য কয়লা আমদানি করছে সরকার। এ ছাড়া দেশে ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় আমদানিও হচ্ছে প্রচুর। এ ছাড়া চলমান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্যও অনেক যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে। তাই আমদানি বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানি হচ্ছে কম। দেশ থেকে রপ্তানি বাড়লে ডলার আসবে। ফলে দেশের রিজার্ভ বাড়বে। সরকারকে রপ্তানি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। না হলে চলমান সংকট থেকেই যাবে।