স্বেচ্ছায় লিঙ্গ পরিবর্তনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রগ্রামে ‘ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া’ কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন না। নারী ও পুরুষ ছাড়া যাঁরা জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে অন্য লিঙ্গের, তাঁরাই এই কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কাছে হিজড়াদের উচ্চশিক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থার সুপারিশ করে। ঢাবি গত শিক্ষাবর্ষের (২০২২-২৩) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রগ্রামে ভর্তিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হিজড়াদের জন্য ‘ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া’ নামে একটি কোটা চালু করে।
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে শিক্ষার্থীরা এই কোটার বিরোধিতা করেন। তাঁরা এই কোটা বাতিল অথবা কোটা থেকে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যাঁরা স্বেচ্ছায় সার্জারির মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে অথবা পরিপূর্ণ নারী বা পুরুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বৈশিষ্ট্য থাকার পরও যাঁরা নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের পরিচয় দেন, তাঁরাও নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার বলে এই কোটার মাধ্যমে সুবিধা ভোগ করবেন এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। তাই এই কোটা থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি বাদ দিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জোবায়ের বলেন, ‘হিজড়া প্রাকৃতিক বিষয়, কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার ভিন্ন বিষয়। একজন পুরুষ যদি দাবি করেন যে আমি এখন নারী হয়ে যাব, এখন তাঁকে কি মেয়ে হিসেবে মেনে নেওয়া হবে? তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কুলার থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের কোটা বাতিল করতে হবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী প্রিয়া বলেন, ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া এক নয়।
ট্রান্সজেন্ডারদের প্রাকৃতিক নারী-পুরুষদের ন্যায় লিঙ্গ থাকে। এই মুহূর্তে ঢাবি বিশেষ কোটা চালুর কারণে সমাজে একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
স্বেচ্ছায় রূপান্তরিত যারা হয় অথবা পরিপূর্ণ নারী অথবা পুরুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বৈশিষ্ট্য থাকার পরও যারা নিজেদের অন্য লিঙ্গের পরিচয় দেয়, তারা এই কোটার আওতায় পড়বে না। জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে যারা নারী ও পুরুষের বাইরে অন্য লিঙ্গবৈচিত্র্যের হয়, তারাই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এরপর এই কোটার আওতায় পড়বে।
কেন এই কোটা—এ বিষয়ে তাওহিদা জাহান বলেন, ‘এই জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাদের সমাজে অনেক পিছিয়ে আছে। তাদের সমাজের বোঝা মনে করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে বিশেষ কোটা ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে। সেটির আলোকেই ঢাবিতে পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে আনতে ও উচ্চশিক্ষা তাদের জন্য সহজ করতে এই কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই কোটায় যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের শনাক্তকরণে পরিচয়পত্র দেখা হবে, যাচাই-বাছাই করা হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকবেন, বিষয় বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারী এই কোটার আওতায় পড়েন কি না তা বিবেচনা করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘কোটা যেভাবে রয়েছে সেভাবে বহাল ও অপরিবর্তনীয় থাকবে। জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে যাঁরা নারী ও পুরুষের বাইরে অন্য লিঙ্গবৈচিত্র্যের, তাঁরাই এই কোটার সুযোগ পাবেন। এই জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলে দিতে ঢাবিতে ভর্তিতে তাঁদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা স্বেচ্ছায় লিঙ্গান্তর করেন, তাঁদের এই কোটায় সুযোগ দেওয়া হবে না।’