শিগগিরই গ্যাসসংকটের সমাধান হচ্ছে না। গ্যাসের সরবরাহ দ্রুত বাড়ানোর কোনো উপায় পেট্রোবাংলার হাতে নেই। দেশে গ্যাসের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এলএনজি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে।
ফলে সংকট তীব্র হচ্ছে।
এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিল্প খাত। কষ্টে আছেন আবাসিক গ্রাহকরাও। সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় পরিবহন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফলে সংকট তীব্র হচ্ছে।
এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিল্প খাত। কষ্টে আছেন আবাসিক গ্রাহকরাও। সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় পরিবহন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নীরবে অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিচ্ছে গ্যাসসংকট। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল সোমবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে দুই হাজার ৪৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গতকাল এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয় ৪১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
কয়েক মাস আগেও এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হতো ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। বর্তমানে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এলএনজির দুটি স্টেশন আছে। এর মধ্যে মার্কিন কম্পানি এক্সিলেটরের টার্মিনালটি মেরামত করা হচ্ছে। ওই টার্মিনালের সরবরাহ ক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
চাহিদার তুলনায় ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দুই হাজার ২৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭৭০ মিলিয়ন ঘনফুট।
সার কারখানায় ৩২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা, সরবরাহ করা হচ্ছে ১৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট। শিল্প-পরিবহন ও আবাসিক খাতে সরবরাহ হচ্ছে এক হাজার ৫৫৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার গতকাল বলেন, ‘আমরা ভাবিনি এবার ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেও শীত থাকবে না। সাধারণত এই সময়ে শীত থাকে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। আমাদের পরিকল্পনা ছিল বিদ্যুতে যে গ্যাস ব্যবহার হয় তা আমরা শিল্পে দেব। কিন্তু শীত তেমনভাবে না পড়ায় এখনো বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদন কমেনি। তাই গ্যাসের চাহিদাও কমেনি। বলা যায়, জলবায়ুর অপ্রত্যাশিত আচরণের শিকার হয়েছি আমরা।’
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ‘টার্মিনালের মেরামতের কারণে গ্যাসসংকট বেড়েছে এটাও ঠিক না। শীতের কারণে এই সময়ে এলএনজি আমদানির পরিমাণ কম রাখা হয়েছে। যে পরিমাণ এলএনজি রাখা হয়েছে সেটি একটি টার্মিনাল দিয়েই যথেষ্ট। যদি কোনো কারণে এই টার্মিনালটি বন্ধ হয়ে যায় তখন বিপদে পড়তে হবে। তবে এলএনজি টার্মিনাল ঠিক হলেই যে গ্যাসসংকট থাকবে না, সেটিও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, উদ্যোক্তারা উচ্চহারে গ্যাসের বিল দিয়েও চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছেন না, এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘শিল্প-কারখানায় বিকল্প ব্যবস্থায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা রেখে এলএনজি টার্মিনাল মেরামতে যাওয়ার দরকার ছিল। এ ব্যাপারে গত সপ্তাহে আমি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন ডিসেম্বরের শেষ দিকে মেরামত শেষ করে দুটি টার্মিনাল থেকেই এলএনজি সরবরাহ করবেন। আমরা আশা করছি তখন এই সংকট কেটে যাবে।’
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, সোবহানবাগ, উত্তরা, দক্ষিণখান, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্যাসসংকট সবচেয়ে বেশি থাকছে। এসব এলাকার গ্রাহকদের মধ্যে অনেকে বাধ্য হয়ে দিনের একটা সময় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না করছেন। আবার অনেকে বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছেন।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক রওশন আরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর শীতের সময় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। কিন্তু এবার শীত পড়ার আগে থেকেই গ্যাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন ভোরে উঠে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে। আবার দুপুরে গ্যাস থাকলেও চাপ খুবই কম থাকে, এতে রান্নায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অনেক সময় বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক চুলায় রান্নার কাজ করতে হচ্ছে।
ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে গ্যাসের সংকট তো নতুন না, তার পরও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর কার্যক্রমগুলোর জোরালো উদ্যোগ নেই। কৈলাসটিলা ও রশিদপুর কূপে অনেক রির্জাভ গ্যাস রয়েছে। কিন্তু উৎপাদনের হার খুবই কম। পেট্রোবাংলা উদ্যোগ নিলেই এ দুটি কূপ থেকে আরো ৭০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এতে চলমান গ্যাসসংকট কিছুটা হলেও কমানো যায়।
বদরূল ইমাম আরো বলেন, বিদেশি কম্পানিগুলো তাদের কূপ থেকে বেশি হারে গ্যাস উৎপাদন করতে পারলেও দেশি কম্পানির উৎপাদন হার কম কেন? এখানে পেট্রোবাংলাকে আরো কাজ করতে হবে। শুধু আমদানিনির্ভরতায় গ্যাসসংকট কাটানো সম্ভব না।