ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে

 

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে দেশটির অর্থ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ অর্থ আছে তা পর্যাপ্ত নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তাদের কাছে ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারেরও কম অবশিষ্ট আছে।

 

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য ও পরিবহন খাতে খরচ বেড়ে যায়। ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আমদানি খরচ আগের তুলনায় অনেক বাড়ে। তবে সে তুলনায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়েনি। এতে আমদানির জন্য ডলারের যে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়, তা চাপ তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ, জরুরি জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

 

আইএমএফও সঠিকভাবে রিজার্ভের হিসাবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম।

 

গত ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে তা কমে হয়েছে ২ হাজার ৫১৬ কোটি ডলার (২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার)। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৯৫২ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার)। গত বুধবার ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই অর্থের পুরোটা ব্যবহারযোগ্য নয়। আইএমএফও সঠিকভাবে রিজার্ভের হিসাবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী  বলেন, রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে নেমেছে, তা সংকটজনক না হলেও উদ্বেগজনক। ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। এটাও ধরে রাখা হয়েছে জোর করে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। তা না হলে আরও কমে যেত। এখন আর কৃত্রিমভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা করার প্রয়োজন নেই। এই বাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে। তাহলে দাম কিছুটা বেড়ে পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তখন রিজার্ভ আবার বাড়বে।

 

মুস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, এখন খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ফলে কেউ না কেউ এই দামে ডলার কিনছে, এই দামে হুন্ডি করছে। বৈধ পথে পুরো প্রবাসী আয় দেশে আসছে না। যার মাধ্যমে আবার অর্থ পাচার হচ্ছে। আবার অন্য মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। পাচারের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগে সরকার সফল হয়নি, পাচারও ঠেকাতে পারেনি। ফলে অর্থনীতিতে সংকট এখন বহুমুখী। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এই সংকট সহসা কাটার সম্ভাবনা নেই।

 

                               রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে নেমেছে, তা সংকটজনক না হলেও

                               উদ্বেগজনক। ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের

                               আমদানি দায় মেটানো যাবে। এটাও ধরে রাখা হয়েছে জোর

                              করে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।

                                         বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী

 

বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর ৭/অ ধারার বলে বৈদেশিক মুদ্রার ধারণ ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার দায় অর্থাৎ আমদানি দায় পরিশোধের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে রিজার্ভ। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য রীতি অনুযায়ী, সাধারণত কোনো দেশের হাতে তিন মাসের বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানোর মতো মজুত থাকতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *