ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসদুপায় অবলম্বন ও অন্যান্য অপরাধ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে এসব অপরাধের দায়ে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আর ছয় বছরে স্নাতক দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে পাওয়া ২০টি নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
নথি অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে পরীক্ষায় অসদুপায় ও অন্যান্য অপরাধের জন্য ২৮০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৪৯ জন শিক্ষার্থী, ২০১৯ সালে ৪০ জন, ২০২০ সালে আটজন, ২০২১ সালে ৪৭ জন, ২০২২ সালে ৪২ জন ও ২০২৩ সালে ৯৪ জন শিক্ষার্থী শাস্তি পেয়েছেন। বছরে গড়ে ৪৭ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ২০২০ সালে পরীক্ষা কম হয়।
তাই শাস্তির হারও কম।
অপরাধ ও শাস্তির ধরন
ঢাবির সিন্ডিকেট অনুমোদিত ‘পরীক্ষার অপরাধ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ শিরোনামে নীতিমালা রয়েছে। তাতে পরীক্ষার অপরাধ হিসেবে ১৬টি কর্মকাণ্ড ও আট ধরনের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। গত ছয় বছরে পরীক্ষায় অপরাধের দায়ে প্রশাসন ছয় ধরনের শাস্তি দিয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এর মধ্যে পরীক্ষক বা সংশ্লিষ্ট কাউকে হুমকি দেওয়া, উত্তরপত্র পাচার, উত্তরপত্রের অংশ পরিবর্তন, পরীক্ষার হলে নিজ হাতে লেখা নয় এমন অংশ উত্তরপত্রে যোগ করায় পরীক্ষা বাতিলসহ পরবর্তী তিনটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না, এমন শাস্তি পেয়েছেন ১৬ জন।
পরীক্ষার হলে অন্যের খাতা দেখে লেখা, অন্য কোনো কাগজ থেকে দেখে লেখা এবং পরীক্ষার হলে বাধা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধে পরীক্ষা বাতিলসহ পরবর্তী দুটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এমন শাস্তি পেয়েছেন ১৪৩ জন। পরীক্ষার হলে প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া অন্য কোনো কাগজ থাকার অপরাধে পরীক্ষা বাতিলসহ পরবর্তী একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার শাস্তি পেয়েছেন ৯৪ জন। পরীক্ষার হলে অন্যজনের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে দুজনকে। নীতিমালায় উল্লেখ নেই এমন অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে ২২ জনের।
পরীক্ষা বাতিলসহ জরিমানার শাস্তি পেয়েছেন দুজন এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে এক শিক্ষার্থীর।
স্নাতক দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে বেশি
গত ছয় বছরে শাস্তি পাওয়া ২৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পর্যায়ের ৫১ জন, স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ৫৩ জন, স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ৬৪ জন, স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ৬৭ জন, স্নাতক প্রথম বর্ষের ৪৪ জন ও ডক্টরেট পর্যায়ের একজন রয়েছেন।
আইন, ফারসি বিভাগে শাস্তি বেশি
শাস্তিপ্রাপ্ত ২৮০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৯টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী শাস্তি পেয়েছেন। গত ছয় বছরে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও অন্যান্য অপরাধের জন্য আইন বিভাগ এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি, ২০ জন করে শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ১৮ জন, দর্শন বিভাগের ১৬, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১২, গণিত বিভাগের ১১ জন এবং মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থী শাস্তি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাবির অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ‘স্কুল-কলেজের পরীক্ষার সময় আশপাশে সহপাঠীদের এই অপরাধ করতে দেখে কিছু শিক্ষার্থী নিজেরাও পরে এই অপরাধ করে। শিক্ষক বিষয়টি ক্লাসে পড়াননি, এর পরও পরীক্ষায় এসেছে, এরূপ কথা বলেও অপরাধের একপ্রকার ন্যায্যতা তৈরি করে ফেলে শিক্ষার্থীরা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সিজিপিএ বা নম্বর পাওয়াকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই অনেক শিক্ষার্থী মনে করে নম্বর না পেলে তার জীবন ব্যর্থ। এই ভয় থেকেও অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় নকল করে থাকে।’