খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় দেশের ২২ শতাংশ মানুষ

 

দেশের ২১.৯১ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

 

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়লেও দেশের মানুষের ক্যালরি গ্রহণের হার বেড়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। রবিবার বিবিএসের অডিটরিয়ামে এ বিষয়ক প্রকাশনার মূল উপাত্ত উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম। আটটি প্রশ্নের ভিত্তিতে ২৯ হাজার ৭৬০টি পরিবারের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

 

বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক খান মো. নুরুল আমিন প্রমুখ।

 

বিবিএসের হিসাবে খাদ্য নিরাপত্তা সবচেয়ে কম রংপুর বিভাগে, ২৯.৯৮ শতাংশ পরিবার। ঢাকা বিভাগে এ হার মাত্র ১৬.৪০ শতাংশ। আর দেশে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ০.৮৩ শতাংশ মানুষ। অবশ্য এ হার সিলেটে সর্বোচ্চ, ১.৪২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গড় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ২১.৯১ শতাংশ। এ ছাড়া বরিশালে ২২.৮৩, চট্টগ্রামে ১৯.৬৬, ঢাকায় ১৬.৪০, ময়মনসিংহে ২৬, রাজশাহীতে ২৫.০১ এবং সিলেটে ২৬.৪৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। দেশে গড় চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ০.৮৩ শতাংশ।
বরিশালে এই হার ০.৬৭, চট্টগ্রামে ১.১৬, ঢাকায় ০.৬৪, খুলনায় ১.০৯, ময়মনসিংহে ০.৫৩, রাজশাহীতে ০.৫১ এবং সিলেটে ১.৪২ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজন। সিলেট বিভাগের মানুষের মধ্যে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে।দেশের বেশির ভাগ খাবার গ্রামে উৎপাদিত হলেও গ্রামের মানুষের মধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম এলাকাগুলোতে ২৪.১২ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিপরীতে শহর এলাকায় এই হার ২০.৭৭ শতাংশ। এমনকি চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা  বেশির ভাগ মানুষও গ্রামেই থাকেন। গ্রামে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ০.৯৫ শতাংশ মানুষ। শহরে এ হার ০.৬৭ শতাংশ।প্রতিবেদনে দেখা যায়, খাদ্য উদ্বৃত্ত হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন মাথাপিছু খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেকেন্ডারি ডাটা বা দ্বিতীয় ধাপের উপাত্তের ভিত্তিতে খাদ্য উদ্বৃত্ত হিসাব মতে, ২০১৬ সালে দৈনিক মাথাপিছু মোট খাদ্য সরবরাহ ছিল ২৪৬১ কিলো ক্যালরি। ২০২১ সালে তা ২৫১৬ কিলো ক্যালরিতে দাঁড়িয়েছে। 

দেশে প্রতিটি খানায় যে পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে তা গড়ে ৫১ দিন পর্যন্ত পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। গ্রামের ক্ষেত্রে তা ৬৩ দিন। শহরে ৩৫ দিন এবং সিটি করপোরেশেন এলাকায় ১১ দিন। এটি গমের ক্ষেত্রে ৯ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

 

অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা এবং পর্যবেক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক শহিদুল আলম বলেন, দেশে উৎপাদিত খাবারের ২১ শতাংশ নষ্ট হয়। আর রান্না থেকে খাবার পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের খাদ্যতালিকা পাল্টাতে হবে। শুধু ভাত আর রুটি নয়, বরং অন্যান্য খাদ্যকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

 

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান নিয়ে এটি বিবিএসের প্রথম কাজ। দেশে চার কোটি ১০ লাখ পরিবার আছে। এখানকার ২৯ হাজার পরিবারের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *